নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকায় “বিশ্ব সুফি সংস্থা”র উদ্যোগে পাবনা জেলার দোগাছী কায়েমকোলা নিবাসী সুফি সাধক দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরীর প্রতিষ্ঠিত দরবার শরীফ ভাঙচুর, মালামাল লুট ও অগ্নিসংযোগকারী গংদের দ্রুত গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
ড. মাওলানা আনিসুর রহমান জাফরী গোলামে ওয়ার্সী আল জাহাঙ্গীরের পরিচালনায় এবং শাহসুফি মাওলানা তৌহিদুল ইসলাম চিশতী নিজামীর সভাপতিত্বে এতে প্রতিবাদী বক্তব্য পেশ করেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর শাহ্ নুরে হাসান দিপু নুরী আল সুরেশ্বরী, সুফি আফতাব জিলানী, সুফি নাসির উদ্দিন চিশতী, ড. শাহ্ আলাউদ্দিন আলন হাক্কানী, শাহ সুফি মোস্তাক আহমাদ, শাহ্ সুফি শামসুজ্জামান চৌধুরী সজীব, শাহসুফি ডা. সামশুল আলম চিশতী, শাহ সুফি কবি সৈয়দ তারিক আল জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরী, শাহ সুফি লুৎফুর রহমান বাঁধন, শাহ সুফি তোফায়েল আজম, মুফতী আর এফ রাসেল আহমদ ওয়ার্সী আল জাহাঙ্গীর প্রমূখ।
বক্তারা বলেন- “পাবনা জেলার দোগাছী ইউনিয়নের কায়েমকোলা গ্রামের কাজী শাহাবুদ্দিন হাফেজিয়া মাদ্রাসার সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হাই ফারুকীর নেতৃত্বে গত তিন দিন ধরে ফেইসবুক মিডিয়ায় ধারাবাহিক মিটিং ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে স্থানীয় জন সাধারণকে উষ্কে দিয়ে সাথে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও উগ্রবাদী মৌলবীদের নিয়ে গত ২২ মার্চ, ২০২৫ তারিখ রোজ শনিবার সকাল ১০ টায় সুফি সাধক দেলোয়ার হোসাইন আল জাহাঙ্গীরের প্রতিষ্ঠিত বাসভবন ও খানকা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। অথচ বিগত তিন ধরে বারবার ধর্মান্ধ হুজুগি মৌলবাদী গোষ্ঠীর এই ষড়যন্ত্র ও হামলা থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে বারবার সাহায্যের জন্য ছুটে যাওয়ার পরও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কাছে থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি। বরং ঐ এলাকার উগ্রবাদী তওহিদী জনতা মবদের পক্ষ নিয়ে ঐ এলাকার স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জোরপূর্বক ভিক্টিম সুফি সাধক দেলোয়ার হোসাইন আল জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে মুচলেকা লিখে রাখে এবং তারা তাকে নিরাপত্তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
গতকাল সকাল ১০ টায় ফেইসবুকে লাইভ বার্তা দিয়ে তার বাড়িতে আক্রমণ জন্য উগ্র’বাদীরা রওয়ানা হলে মিডিয়া সাংবাদিক ও সুফিবাদ সার্বজনীন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাসচিব জনাব আনিসুর রহমান জাফরী পাবনার সদর এলাকার পুলিশ ইনচার্জকে বারবার যোগাযোগ করে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানালেও তিনি তাতে সাড়া দেন নি। হামলা শুরু হবার ঠিক আগ মুহূর্তে সুফি সাধক দেলোয়ার হোসাইন আল জাহাঙ্গীর তার বৃদ্ধা মা ও ভক্তদের নিয়ে কোন ভাবে জীবন রক্ষা করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন।
উগ্রবাদী দুর্বৃত্ত গোষ্ঠির দ্বারা সম্প্রতি সারাদেশে সুফি স্থাপনা ও সুফি সাধক দেলোয়ার আল জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরীর দরবার শরীফ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার ন্যায্য দাবি ও অবস্থান : উপদেষ্টা সরকার, প্রশাসন, জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করত: নিন্মে আমাদের নায্য দাবীসমূহ তোলে ধরা হলো—
১. হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ ঘোষণা : আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক সুফি স্থাপনা, মাজার ও পীর আউলিয়াদের স্মৃতিসৌধ উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হাতে আক্রান্ত হয়েছে। এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সহনশীলতার ওপর সরাসরি আঘাত। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অপরাধী চক্রের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করছি।
২. প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে অবস্থান : প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও নীরব ভূমিকার কারণে উগ্রবাদীরা বারবার হামলা চালানোর সাহস পাচ্ছে। আমরা আজকের কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশাসনকে সতর্ক করছি- যদি অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবো এবং দায়ী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করতে বাধ্য হবো।
৩. হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি : প্রতিটি হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করে অবিলম্বে উগ্রবাদীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
হামলায় সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর তালিকা প্রকাশ ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। প্রশাসন যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।
৪. সুফিস্থাপনা, মাজার ও দরগাহগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা : প্রতিটি সুফি স্থাপনা ও মাজারে পুলিশি পাহারা ও সিসিটিভি স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রশাসন, সুফি ভক্ত ও স্থানীয় জনগণের সমন্বয়ে ‘মাজার রক্ষা কমিটি’ গঠন করা হবে।
প্রশাসন যদি ব্যর্থ হয়, জনগণ নিজেরাই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
৫. সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা স্পষ্ট করতে আহ্বান : সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের এই ইস্যুতে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে। যেসব রাজনৈতিক দল উগ্রবাদীদের মদদ দিচ্ছে, তাদেরকে জনসমক্ষে চিহ্নিত করা হবে। আমরা সতর্ক করে দিতে চাই—যারা নীরব থাকবে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
৬. আন্তর্জাতিক সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা :
UNESCO ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সুফি ঐতিহ্য রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করব
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (OIC) কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাঠানো হবে।
উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানানো হবে।
৭. ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ঘোষণা:
সরকার ও প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা—
রাজধানী ও জেলাসমূহে টানা অবস্থান ধর্মঘট দেবো।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করবো।
দেশব্যাপী ‘মাজার রক্ষা গণআন্দোলন’ গড়ে তুলবো।
চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি :
মাজার ভাঙচুরকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবো এবং উগ্রবাদীদের আশ্রয়দাতা ও প্রশাসনের গাফিলতির বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে রাস্তায় নামবো এবং প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করে আমাদের নায্য দাবিসমূহ আদায় করব ইনশাআল্লা।
সর্বশেষ সতর্কবার্তা:
সরকারের পক্ষ থেকে মাজার ভাঙচুরের বিষয়ে “জিরো টলারেন্স” ঘোষণা এবং প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের কার্যালয় হতে নিষেধাজ্ঞা প্রজ্ঞাপন জারি ও ৬ আগস্টের বিপ্লবী সমন্নয়কগণেরা মাজারে হামলার বিরুদ্ধে কথা বলার পরও দুষ্কৃতকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে না কেন? এ বিষয়ে প্রশাসনের নিবর ভূমিকার কারণ কী?
যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয়, জনগণই গণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে! সুফি ঐতিহ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে। আল্লাহর ভালোবাসা, নবির আদর্শ ও সুফি মানবতাবাদ রক্ষার লড়াই অব্যাহত থাকবে!
Leave a Reply